বাংলা মুভিতে ইতিহাস, রহস্য আর অ্যাডভেঞ্চারের মিশেল খুব কমই দেখা যায়। কিন্তু ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ সেই বিরল কিছু মুভির মধ্যে একটা, যেখানে গল্প শুরু হয় এক সাধারন বিয়েতে গিয়ে আর শেষ হয় এক চমকপ্রদ গুপ্তধনের সন্ধানে!
এই মুভির মূল চরিত্র সোনা দা – একজন ইতিহাসপাগল অধ্যাপক, যিনি সবকিছুর মধ্যে ইতিহাসের যোগসূত্র খুঁজে বের করতে ভালোবাসেন। তার সঙ্গী দুই তরুণ—আবির (তার ভাইপো) আর জয়িতা (আবিরের প্রেমিকা)। তিনজন একসাথে পৌঁছে যায় দুর্গেশগড়, যেখানে জয়িতার আত্মীয়র বিয়েতে এসেছে সবাই। প্রথম দেখাতেই দুর্গেশগড় জমিদারবাড়ির পুরনো ধাঁচ, প্রতিটা ছবি, দেওয়ালে ঝোলানো অস্ত্র আর প্রাচীন দলিলপত্র দেখে সোনা দার মাথায় খটকা লাগে—এখানে হয়তো লুকিয়ে আছে কোনো বড় রহস্য।
সেই থেকেই শুরু হয় এক দারুণ অভিযাত্রা—যেখানে ইতিহাসের পাতার সঙ্গে জড়ানো ধাঁধার খোঁজে সোনা দারা নামেন গুপ্তধনের সন্ধানে। প্রতিটা ধাঁধায় রয়েছে বাংলার ইতিহাস, কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক, এমনকি দেশপ্রেমের ছাপ।
গল্প যত এগোতে থাকে, ততই বাড়ে উত্তেজনা। দুর্গেশগড়ের গা ছমছমে গলি, গুপ্ত ঘর, পুরনো মানচিত্র, চিঠি আর ধাঁধা মিলিয়ে একটা গোটা অভিযান যেন দর্শককে ভেতরে টেনে নেয়। কিছু চরিত্র আছে যারা চায় এই গুপ্তধন নিজেদের জন্য, তাই বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে শেষমেশ সোনা দা তার জ্ঞান, বুদ্ধি আর সাহস দিয়ে বের করে আনে সেই ঐতিহাসিক গুপ্তধন।
তবে সবচেয়ে বড় কথা, সোনা দা সেই ধন নিজের কাছে না রেখে দেশের জন্য উৎসর্গ করে—যেন বাংলার গর্ব সবাই জানে, দেখে এবং বুঝে।
সবচেয়ে আগে চেনা দরকার একজনকে—সোনাদা, পুরো নাম সুবর্ণ সেন। একজন ইতিহাসপ্রেমী প্রফেসর, কিন্তু মাথায় শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নেই—আছে বিশাল ধৈর্য, টানটান বিশ্লেষণক্ষমতা আর ভয়ডরহীন মনোভাব। তার সঙ্গে সবসময় থাকে দুই কাছের মানুষ, আবির আর ঝিনুক।
একদিন হঠাৎ হাতে আসে একটি পুরনো দলিল ও ধাঁধাসমৃদ্ধ পাণ্ডুলিপি। তাতে ইঙ্গিত—প্রাচীন বাংলার রাজা শশাঙ্ক এক বিশাল গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছিলেন, যার নামই “কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন”। ইতিহাসের গভীরে যে গল্পটা চাপা পড়ে গিয়েছিল, সেটাই এখন খুঁজে বের করার সময়।
এই তিনজনের যাত্রা শুরু হয় কর্ণসুবর্ণের পথে। পথে মেলে নানা ধাঁধা, সংকেত, গোপন স্থাপত্য আর রহস্যময় প্রতীক। যেমন–গুহার দেওয়ালে খোদাই করা চিহ্ন, শিলালিপির ভেতর লুকিয়ে থাকা বার্তা, এমনকি প্রাচীন শিবমূর্তির চোখের দিকও হয়ে ওঠে ইঙ্গিত।
তবে একটানা পথ কখনোই মসৃণ হয় না। এই অভিযানে ওদের থামাতে চায় কিছু অপরাধী। ভুজঙ্গ নামের এক ধূর্ত চরিত্র আর ড্যাশানান দা নামের এক ভয়ংকর শত্রু ওদের ঠিক পিছু নেয়। তাদের উদ্দেশ্য একটাই—এই গুপ্তধনের দখল নিয়ে নেয়া, যেভাবেই হোক।
কিন্তু সোনাদার বুদ্ধি আর আবির-ঝিনুকের সাহস মিলিয়ে ওরা এগোতেই থাকে। প্রতিটা ধাঁধা মেলানোর পর খুলে যায় ইতিহাসের একেকটা দরজা, আর শেষে যখন গুপ্তধনের ঠিকানায় পৌঁছায়, তখন বোঝা যায়—এটা শুধু সোনা-রত্ন নয়, বরং এক জাতির গর্ব, আত্মপরিচয়ের প্রতীক।
সোনাদা সবসময় বিশ্বাস করে—"এমন ধন ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না, এটা সকলের।" তাই সেই গুপ্তধন সে তুলে দেয় সঠিক জায়গায়—জনসাধারণের জাদুঘরে, ইতিহাসের কোলে।